গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বই ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচুড’ প্রথম হাতে পেয়েছিলাম ১৯৭৪ সালে, লন্ডনের একটি অত্যন্ত সাধারণ দোকানে।
বাড়িতে এনে বইটি উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে মনে হয়েছে আমি এক বিশাল অরণ্য, এক অচেনা—অজানা মহাদেশের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছি। ম্যাজিক রিয়ালিজম বা জাদুবাস্তবতা সম্বন্ধে তখনো আমার ধারণা তেমন স্বচ্ছ ছিল না। আরব্য উপন্যাসের জাদুর কার্পেটের মতো রূপকথার বাইরে, এমন সিরিয়াস ঘটনা লেখায় কীভাবে বাস্তবতার সঙ্গে জাদুবাস্তবতার যোগ হয়, কোন কৌশলে এ জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যের উপাদান হয় এবং মোটেই তা বেমানান লাগে না, বোঝার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলাম। বারবার পড়তে পড়তে চলে যেতাম আবার প্রথম পাতায়, আসলে শুরু হয়েছে কোনখান থেকে এই দীর্ঘ কাহিনি, তা বুঝতে। এই বোঝা না বোঝার দোলাচলে চিত্ত জেনেছিলাম আমি দাঁড়িয়ে আছি এমন এক বিশাল মহৎ হিমালয়ের মতো পর্বতমালার পাদদেশে, না হলে এক বিশাল বনভূমির মুখোমুখি, যার স্বাদ আমার জীবনে নতুন। বলেছিলাম একেবারে স্বতঃসিদ্ধভাবে বইটি নোবেল প্রাইজ পাবে। কেন পাবে তার ব্যাখ্যা করতে বললে কথা হারিয়ে যাবে জানি কিন্তু সেদিন আমি যা বুঝেছিলাম, এগারো বছর পর ১৯৮২ সালে আমার সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলো। ছয় জেনারেশনের লাতিন আমেরিকার পটভূমিকায় এই বিশাল গ্রন্থ যখন আমি অন্য বইয়ের ভিড়ে আর মনে করছি না, যখন মার্কেসকে আর বিভিন্ন লাইব্রেরিতে খুঁজে ফিরছি না, তখনই ঘটল সেই ঘটনা। শ্রেষ্ঠতম সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হলেন এই অনন্যসাধারণ সাহিত্যিক। নোবেল পেয়ে গেলেন। নোবেলের ইতিহাসে যে কয়েকজন যথার্থই এই পুরস্কারের উপযুক্ত, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে মার্কেস একজন। আমার ভবিষ্যদ্বাণী সার্থক হলো। আমি আনন্দিত হলাম। বুঝলাম এই পৃথিবীর বিরাট গ্রন্থশালায় দেশ বা মহাদেশ, ভাষা বা পরিবেশ, পটভূমি বা অচেনা মানুষ কোনো বড় কথা নয়। আসলে আমাদের পরিচয় পৃথিবীর মানুষ। যে পৃথিবী চেনাজানা গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও একক। আর এই সাহিত্যই আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় একটি সুন্দর শামিয়ানার নিচে।
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বই ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচুড’ প্রথম হাতে পেয়েছিলাম ১৯৭৪ সালে, লন্ডনের একটি অত্যন্ত সাধারণ দোকানে।
By সালেহা চৌধুরী
Category: প্রবন্ধ
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের বই ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচুড’ প্রথম হাতে পেয়েছিলাম ১৯৭৪ সালে, লন্ডনের একটি অত্যন্ত সাধারণ দোকানে।
বাড়িতে এনে বইটি উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে মনে হয়েছে আমি এক বিশাল অরণ্য, এক অচেনা—অজানা মহাদেশের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছি। ম্যাজিক রিয়ালিজম বা জাদুবাস্তবতা সম্বন্ধে তখনো আমার ধারণা তেমন স্বচ্ছ ছিল না। আরব্য উপন্যাসের জাদুর কার্পেটের মতো রূপকথার বাইরে, এমন সিরিয়াস ঘটনা লেখায় কীভাবে বাস্তবতার সঙ্গে জাদুবাস্তবতার যোগ হয়, কোন কৌশলে এ জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যের উপাদান হয় এবং মোটেই তা বেমানান লাগে না, বোঝার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলাম। বারবার পড়তে পড়তে চলে যেতাম আবার প্রথম পাতায়, আসলে শুরু হয়েছে কোনখান থেকে এই দীর্ঘ কাহিনি, তা বুঝতে। এই বোঝা না বোঝার দোলাচলে চিত্ত জেনেছিলাম আমি দাঁড়িয়ে আছি এমন এক বিশাল মহৎ হিমালয়ের মতো পর্বতমালার পাদদেশে, না হলে এক বিশাল বনভূমির মুখোমুখি, যার স্বাদ আমার জীবনে নতুন। বলেছিলাম একেবারে স্বতঃসিদ্ধভাবে বইটি নোবেল প্রাইজ পাবে। কেন পাবে তার ব্যাখ্যা করতে বললে কথা হারিয়ে যাবে জানি কিন্তু সেদিন আমি যা বুঝেছিলাম, এগারো বছর পর ১৯৮২ সালে আমার সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলো। ছয় জেনারেশনের লাতিন আমেরিকার পটভূমিকায় এই বিশাল গ্রন্থ যখন আমি অন্য বইয়ের ভিড়ে আর মনে করছি না, যখন মার্কেসকে আর বিভিন্ন লাইব্রেরিতে খুঁজে ফিরছি না, তখনই ঘটল সেই ঘটনা। শ্রেষ্ঠতম সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হলেন এই অনন্যসাধারণ সাহিত্যিক। নোবেল পেয়ে গেলেন। নোবেলের ইতিহাসে যে কয়েকজন যথার্থই এই পুরস্কারের উপযুক্ত, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে মার্কেস একজন। আমার ভবিষ্যদ্বাণী সার্থক হলো। আমি আনন্দিত হলাম। বুঝলাম এই পৃথিবীর বিরাট গ্রন্থশালায় দেশ বা মহাদেশ, ভাষা বা পরিবেশ, পটভূমি বা অচেনা মানুষ কোনো বড় কথা নয়। আসলে আমাদের পরিচয় পৃথিবীর মানুষ। যে পৃথিবী চেনাজানা গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও একক। আর এই সাহিত্যই আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় একটি সুন্দর শামিয়ানার নিচে।